ডেস্ক রিপোটঃ বর্তমানে আমাদের দেশে যুব সমাজের অধঃপতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তির ভয়াল থাবায় প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে ফেলছে। মাদকদ্রব্যের টাকা যোগাড়ের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। দেশব্যাপী মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধ এবং দেশের যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযান দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ কর্তৃক বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে, টেকনাফ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অবস্থানরত একটি শক্তিশালী মাদক ও চোরাচালানকারী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবৎ বিপুল পরিমানে ইয়াবা পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার হতে ক্রয় করে সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকাতে সরবরাহ করে আসছে। সিন্ডিকেটের মূল হোতা মোঃ মনজুর আলম (৪৯) মনজুর চট্টগ্রামে বসবাস করলেও ইয়াবা চালানের কাজে তার প্রধান সহযোগী মোঃ গিয়াস উদ্দিন গেসু (৩১) সহ প্রায়শই ঢাকায় তার প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল মান্নানের নিকট অবস্থান করে। অন্য দিকে গোপনে সমুদ্রপথে মিয়ানমার হতে টেকনাফ-কক্সবাজার হয়ে ট্রলারে ইয়াবা চালান আনোয়ারা কিংবা পতেঙ্গা বীচে আনলোডের পর তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের কাজটি করে মনজুরের বিশ্বস্ত চালক মোঃ সেলিম এবং সিন্ডিকেটের অপর সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন।
পরবর্তীতে র্যাব বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করে এবং গোটা সিন্ডিকেটটিকে হাতে নাতে গ্রেফতারের জন্য বিশেষ তৎপরতা ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহন করে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সূত্রে র্যাব জানতে পারে যে, গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখ আনুমানিক রাত ২০০০-২৩০০ ঘটিকার সময় উক্ত সিন্ডিকেটের একটি বড় ধরনের ইয়াবা চালান প্রাইভেটকার চালক সেলিম ও মহিউদ্দীনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হতে সরাসরি ঢাকায় আসছে। এ প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখ সন্ধ্যা ১৯০০ ঘটিকার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে র্যাব কর্তৃক অস্থায়ী চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়। রাত আনুমানিক ২৩৫০ ঘটিকার দিকে একটি প্রাইভেটকার র্যাবের চেকপোষ্ট দেখতে পেয়ে সন্দেহজনক ভাবে গাড়ী ঘুরিয়ে ফেলতে লাগলে র্যাব উক্ত গাড়ীকে চ্যালেঞ্জ করে।
উক্ত সময় গাড়ীটি উল্টাদিকে ঘুরিয়ে দ্রুত চলতে শুরু করলে র্যাবের আভিযানিক দলও তাদের পিছু ধাওয়া করে এবং সিমরাইলস্থ রহমান কোল্ড স্টোরেজ সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে গাড়ীটিকে দুজন আসামীসহ আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় চালক গাড়ী ছেড়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে ধরে ফেলে। এরপর গাড়ী তল্লাশী করে গাড়ীর ভেতর হতে ৫,০০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি চোরাচালান/পাচারে ব্যবহৃত প্রাইভেট গাড়ী, ৯টি চোরাচালানে ব্যবহৃত মোবাইল সেট। জিজ্ঞাসাবাদে চালককে (১) মোঃ সেলিম (২৫), পিতা-আবু তাহের, থানা-আনোয়ারা, জেলা-চট্টগ্রাম এবং অপরজন (২) মোঃ মহিউদ্দিন (২৫), পিতা-সিরাজ মিয়া, থানা-লাঙ্গলকোট, জেলা-কুমিল্লা বলে সনাক্ত করা হয়।
আটককৃত সেলিম ও মহিউদ্দিনকে তাৎক্ষনিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সিন্ডিকেটের মূল হোতা মনজুর বর্তমানে তার ডান হাত গিয়াসসহ সিমরাইলস্থ মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইয়াবা বিক্রির জন্য অবস্থান করছে। এ প্রেক্ষিতে র্যাবের আভিযানিক দলটি তৎক্ষনাৎ উক্ত এলাকার দিকে গমন করে। আটককৃতদের দেয়া তথ্য মতে আনুমানিক রাত ০০৩৬ ঘটিকায় মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ার পর ঐখানে কিছু ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ প্রেক্ষিতে র্যাব তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে তারা হঠাৎ পালিয়ে যেতে উদ্যত হয়।
উক্ত সময় র্যাবও তাদের ধাওয়া করে সিন্ডিকেটের মূল হোতা (৩) মোঃ মনজুর আলম @ মনজুর (৪৯), পিতা-মৃত হাজী আঃ করিম, পো- পাটানতলী, থানা-ডাবলমুরিং, জেলা-চট্টগ্রাম, মনজুরের ডান হাত (৪) মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৩১) (গুলিবিদ্ধ), পিতা-মোঃ ইলিয়াস, থানা-সাতকানিয়া, জেলা-চট্টগ্রাম, (৫) সিন্ডিকেটের ঢাকা প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল মান্নান(৫৫), পিতা-মৃত আজর আলী, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ, (৬) সিন্ডিকেটের রাজশাহী প্রতিনিধি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৭), পিতা-নওশাদ আলী, থানা-গোদাগারী, জেলা-রাজশাহী’দেরকে ৪০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ইয়াবা বিক্রির নগদ ৩,৪৪,৫৭৮ টাকা, মোবাইল সেট।
আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মঞ্জুরের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটটি বিগত ০২ বছরের অধিক সময় ধরে পাশর্¡বর্তীদেশ মায়ানমার হতে সমুদ্রপথে গোপনে টেকনাফ-কক্সবাজার রুটে ট্রলারের মাধ্যমে বিপুল পরিমান ইয়াবা পাচার করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং পতেঙ্গা ঘাটে আনলোড করতো। অতপর ইয়াবার চালানটি তারা চালক সেলিম ও মহিউদ্দিনের মাধ্যমে মনজুর ও গিয়াসের তত্ত¡বধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করতো। সিন্ডিকেটের ঢাকার প্রতিনিধি মান্নান এবং রাজশাহীর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর পরিবহনকৃত/পাচারকৃত ইয়াবা নিজ নিজ এলাকায় বিক্রি করতো। র্যাব কর্তৃক আটককৃত সর্বমোট ৫,৪০,০০০ পিস ইয়াবার মধ্যে বিপুল পরিমান অত্যন্ত উন্নত মানের ইয়াবা পাওয়া যায়, যার প্রতি পিস বাজার মূল্য ৫০০-৭০০ টাকা। গ্রেফতারকৃত আসামী ছাড়াও এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা বর্তমানে পলাতক আছে ।