অনলাইন ডেস্কঃ- শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মসূচি আগামীকাল রোববার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। পে-স্কেলে বেতন বৈষম্য নিরসনসহ অন্যান্য দাবিতে শিক্ষকরা সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। আলটিমেটামের শেষদিন গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। রাতে শিক্ষামন্ত্রীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষকদের দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে দুই মন্ত্রী এ নিয়ে এদিন সন্ধ্যায়ই অর্থমন্ত্রীর ৩ নম্বর হেয়ার রোডের বাসভবনে বৈঠক করেন। এ বৈঠকেই মন্ত্রিসভা কমিটির সভা আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রাতে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বসেন। এতে শিক্ষামন্ত্রী দাবি-দাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি শিক্ষকদের অবহিত করেন।
এদিকে আগামীকাল দুপুরে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদাগত সমস্যা নিয়ে সরকারের বেতনবৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুপুর ১টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একটি দৈনিককে বলেন, ‘বেতন ও পদমর্যাদার বিষয়ে শিক্ষকদের যে দাবি, তার একটা সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান হবে। এ লক্ষ্যে আগামী কাল রোববার সরকারের বেতনবৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সরকার আমলে নিয়েই এ কমিটি গঠন করেছিল। তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। এজন্য ইতিবাচকভাবে কাজ চলছে। বৈঠক আহ্বানের বিষয়টি একটা দৃশ্যমান অগ্রগতি। আসলে এর বাইরেও আমরা কাজ করছি। শিক্ষকদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে সব ধরনের উদ্যোগ ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারাও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।’
বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী আর কোনো কর্মসূচি না দেয়ার জন্য শিক্ষক নেতাদের অনুরোধ করেছেন। একইসঙ্গে ক্লাস, পরীক্ষা এবং ভর্তি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
জবাবে শিক্ষক নেতারা রোববার ফেডারেশনের বৈঠকে সরকারের এসব উদ্যোগের কথা আলোচনা এবং ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়ে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন।
বৈঠক শেষে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, মন্ত্রিসভা কমিটির এ বৈঠক ডাকার মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মনে হচ্ছে, সমস্যা সমাধানের পথেই যাচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘যদিও আমাদের আলটিমেটামের সময় শেষ। তারপরও মন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ফেডারেশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছি না। বৈঠকেই পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠক থেকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নতুন করে কোনো কর্মসূচিতে না যেতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
উল্লেখঃ গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত অষ্টম পে-স্কেলে সরকার সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল দেয়ার বিধান রাখেনি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বলছেন, এ কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সপ্তম পে-স্কেলে ১ নম্বর গ্রেডে বেতন পেলেও অষ্টম পে-স্কেলে তারা তা পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, এ পে-স্কেলে তাদের গ্রেডের দিক থেকে মর্যাদাহানি করা হয়েছে। এ কারণে এ পে-স্কেলের প্রস্তাব করার পর থেকেই (১৪ মে) তারা আন্দোলন করছেন। সর্বশেষ ৬ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় ফেডারেশনের। সেখানে অধ্যাপকদের মধ্য থেকে ২৫ ভাগকে ১ নম্বর গ্রেডে বহাল করাসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়।